© পরিবেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনে মানব স্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয় শব্দ দূষণ যেমন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে তেমনি বায়ুদূষণ ফুসফুসের বহু রোগ সৃষ্টি করে এখানে ফুসফুসের রোগ ও ক্যান্সার সম্পর্কে আলোচনা হল।
© ফুসফুসের রোগ :-
প্রাকৃতিক কারণ ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে শ্বাসবায়ুর গুণগত মান হ্রাস পাওয়ার জন্য মানুষের শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রকম রোগ দেখা যায় । এরকমই ফুসফুসের কতগুলি রোগ হল এজমা বা হাঁপানি , ব্রংকাইটিস , ক্যান্সার।
✓অ্যাজমা বা হাঁপানি:-
বায়ুতে মিশে থাকা ধুলোবালি ,ছত্রাক, ধোঁয়া ,পরাগরেণু ,ধূমপানের ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ুদূষক মানবদেহে প্রবেশ করলে এক ধরনের শ্বাসকষ্ট হয় যাকে হাঁপানি বা অ্যাজমা বলে।
®® রোগের লক্ষণ:-
এই রোগে ফুসফুসে সূক্ষ্ম বায়ুনালী গুলির মধ্যে বায়ু চলাচল কমে যায় ফলে শ্বাসকষ্ট ও প্রদাহ হয়।
®® রোগের কারণ:-
*পরিবেশগত কারণ:-১) প্রকৃতিতে অবস্থিত বিভিন্ন অ্যালার্জেন এর সংস্পর্শে রোগটি বৃদ্ধি পায় । ২) এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার গৌণ দূষক যেমন:- ওজোন , ফরমালডিহাইড, PAN, প্রভৃতি অ্যালার্জেনের প্রভাব বাড়িয়ে দিয়ে এজমার প্রকোপ বৃদ্ধি করে।
** যে উপাদানগুলি এলার্জি তৈরি করতে সক্ষম তাদেরকে এলার্জেন বলে। যেমন -উদ্ভিদের পরাগরেণু ,প্রাণীর মল ,ছত্রাক, ধুলো প্রভৃতি।
* মনুষ্য সৃষ্ট কারণ-
কলকারখানা বাসগৃহে কয়লা তেলের দহনে সৃষ্ট হওয়া কারখানা সৃষ্ট সালফার ডাই অক্সাইড( SO2) , নাইট্রোজেন অক্সাইড(NOx) প্রভৃতি এজমার প্রভাব বাড়ায়।
✓ ব্রংকাইটিস:- ব্রংকাইটিস হল শ্বাসতন্ত্রের রোগ
এই রোগে ফুসফুসে ব্রঙ্কাস এবং ব্রংকিওল গুলির শ্লেষ্মা পর্দায় প্রদাহ ঘটে।
এই রোগে প্রবল কাশি ও কাশির সঙ্গে কফের নির্গমন , দমবন্ধ ভাব , শ্বাসে ঘড়ঘড় শব্দ , নাক ও সাইনাস অবরুদ্ধ হয়।
ধূমপায়ী ও দমকল কর্মী, ঝালাই কর্মী, বার্নিশের কর্মী , ইলেকট্রিক কারখানায় রাসায়নিক গ্যাস , ব্যাটারি কারখানার গ্যাস , নানারকম ধাতু পরিশোধন এর সময় উৎপন্ন গ্যাস , ওই কারখানার কর্মীদের এলার্জি এবং ব্রংকাইটিস এ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
ব্রংকাইটিস এর মূল কারণ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া হলেও পরিবেশ দূষণ রোগ সৃষ্টিতে এবং বৃদ্ধিতে বিপদজনক ভূমিকা নেয় । এর পরিবেশগত প্রধান কারণগুলি হল - বিভিন্ন রকমের সুক্ষ কনা যেমন অ্যাসবেস্টস এর গুড়ো , কয়লা , তুলো , লাটেক্স প্রভৃতি বাতাসে উড়তে থাকে এবং সেগুলি শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে ফুসফুসে এসে পৌঁছলে ব্রংকাইটিস এর প্রকোপ বাড়িয়ে তোলে।
✓ ক্যান্সার:- ক্যান্সার রোগটি জিনগত এবং পরিবেশগত কারণে হতে পারে।
যে রোগে দেহের কলাকোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং তা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে ( মেটাসটেসিস) অন্যান্য কলার ক্ষতিসাধন করে তাকে ক্যান্সার বলে।
কারসিনোজেন
যে সমস্ত পরিবেশগত অধিবিষ মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে সক্ষম তাদের কারসিনোজেন বলে ।
কারসিনোজেন গুলি অনেক ক্ষেত্রেই মানবদেহে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য সক্রিয় জিন বা অঙ্কোজিন এ পরিবর্তিত করে।
ক্যান্সারের কারণ :- ১( কীটনাশক ও আগাছানাশক কীটনাশক গুলি যে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি তা অনেকাংশে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।২) তেজস্ক্রিয় পদার্থের খনিতে কর্মরত শ্রমিকরা রেডন নামক তেজস্ক্রিয় গ্যাসের সংস্পর্শে এলে তাদের ফুসফুসে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । ৩) ধূমপান করার ফলে পরিবেশে প্রচুর পরিমাণে কারসিনোজেন মিশতে থাকে ( যেমন- অ্যাসিটালডিহাইড , ভিনাইল ক্লোরাইড , ফরমালডিহাইড ইত্যাদি ) যা ধূমপায়ীর দেহে সক্রিয়ভাবে এবং অন্যান্য প্রাণীদের দেহে নিষ্ক্রিয় ভাবে ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ৪) নিয়মিতভাবে তামাক চিবোলে মুখের অভ্যন্তরে ক্যানসারের সম্ভাবনা থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন